সর্দিতে নাক বন্ধ হলে করণীয়
সর্দিতে অনেকেরই নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক বন্ধ হয়ে গেলে কোনো কাজেই মন বসে না। শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। মাথা ধরে থাকে সারাক্ষণ। আবার খাওয়া-দাওয়াতেও অরুচি আসে।
বন্ধ নাক খোলার জন্য অনেকেই নানা রকম ড্রপ ব্যবহার করেন। তবে এসব ঔষধের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। অতিরিক্ত ব্যবহারে একটা সময় এসব ওষুধ কোনো কাজে আসে না। সে ক্ষেত্রে ঘরোয়া কিছু সমাধান চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন-
১. রসুনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি শর্ম বন্ধ নাকের সমস্যা দূর করবে। যা ফ্লু প্রতিরোধেও কাজ করে। ২-৩টি রসুন থেঁতলে এক কাপ পানিতে ১০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এরপর পানি ছেঁকে কুসুম গরম পানি পান করতে হবে। দিনে দুবার রসুন পানি পানে দ্রুতই নাক বন্ধভাব ভালো হয়ে যাবে।
২. আদা কুঁচি করে কেটে অল্প লবণে মেখে চিবিয়ে আদার রস গ্রহণ করতে হবে। এভাবে সরাসরি আদার রস পান করলে দ্রুতই নাক বন্ধ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
৩. ইনফেকশন ও নাক বন্ধের সমস্যায় লেবু খেতে পারেন। লেবু খাওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে অর্ধেকটি লেবুর রস, এক গ্লাস পরিমাণ পানি ও এক চা চামচ মধু। প্রথমে পানি গরম করে এতে মধু মিশিয়ে নিতে হবে। পরে এতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে। রোজ দুবার লেবু-মধুর মিশ্রণ খেলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
৪. তেজপাতায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি। যা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাগুলোর প্রকোপ কমাতে কাজ করে। বিশেষত বন্ধ নাকের সমস্যাটি কমিয়ে স্বাদ ফিরিয়ে আনতে তেজপাতা খুব ভালো কাজ করবে। দেড় গ্লাস পানিতে ৫-৬টি তেজপাতা ১৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। জ্বাল দেয়া শেষে পানি ছেঁকে নিয়ে পান করতে হবে।
৫. নাক বন্ধ সমস্যা দূর করার আরেকটি ভালো উপায় মেনথল। গরম পানির মধ্যে কয়েক ফোঁটা মেনথল ফেলে একটি তোয়ালে দিয়ে ঢাকুন। এরপর গরম পানির ভাপ নিন, দেখবেন নাক বন্ধ সমস্যা কেটে গেছে।
৬. ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় নাক বন্ধ ভাব রোধ করতে শোয়ার সময় মাথাকে উঁচু করে শোবেন। এতে মিউকাস কম তৈরি হয়। সবচেয়ে ভালো হয়, ছাদ বা সিলিংয়ের দিকে মুখ করে শুইলে।
৭. নাক বন্ধ রোধে পেঁয়াজ একটি ভালো সামাধান। পেঁয়াজ নাকের সর্দি বের করে দিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। নাকের বন্ধভাব রোধে খোসা ছাড়িয়ে পেঁয়াজ কেটে পাঁচ মিনিট নাকের কাছে রাখুন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি সাময়িকভাবে হলেও নাক বন্ধভাব দূর করতে সাহায্য করবে।
৮. নাক বন্ধ রোধে ঝাল জাতীয় খাবার বেশ উপকারি। এ ক্ষেত্রে ঝাল মরিচ খেতে পারেন। এর মধ্যে থাকা ক্যাপসেসিন নাকের পথ পরিষ্কার করে নাক বন্ধ হওয়া রোধে সাহায্য করবে।
নাকের এই সর্দি দূর করার জন্য আপনি বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। কিছু পদ্ধতিতে নাক দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে। আবার কিছু পদ্ধতিতে কিছুদিন সময় লাগলেও অসুস্থতা কেটে যাবে পুরোপুরি।
কীভাবে সারবে?
খুব ভালো কাজ হয় স্টিম ইনহেল করলে, তাতে আপনার শ্বাসনালীর সমস্ত বাধা সরে যায়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘দিনে দুই বার স্টিম নেওয়ার পাশাপাশি অ্যান্টি অ্যালার্জিক ঔষধ খেলেই সাধারণত সমস্যা সেরে যায়। যাঁরা খুব অ্যালার্জিতে ভোগেন তাঁর ডিসপোজেবল মাস্ক ব্যবহার করতে আরম্ভ করুন ঋতু বদলের সময়টায় অন্তত। ’গলার কাছটায় আরামের জন্য গরম পানিতে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার আর মধু মিশিয়ে খেতে পারেন৷ আদা আর মধু দিয়ে চা খাওয়াও চলে। দুধ আর কাঁচা হলুদ বেশ করে ফুটিয়ে পান করুন, শরীরের ভিতরের সব ইনফেকশন কমাতে তা কার্যকর।
গবেষণা বলছে, নিম্নের নিয়মগুলো মেনে চললে উপকার পেতে পারেন। যেমন-
১. স্যালাইন ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে পারেন
২. যথেষ্ট পানি পান করুন
৩. নাক ঝেড়ে ফেলুন, সর্দি আটকে রাখবেন না
৪. নাক এবং কপালে গরম সেঁক দিন, তবে ত্বক যেন পুড়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন
৫. গরম চা এবং স্যুপ পান করুন
৬. ঝাঁঝালো মেনথল মলম ব্যবহার করুন
৭. গরম পানিতে গরগর করুন
৮. কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন
৯. আপনার নাক যদি অ্যালার্জির কারণে বন্ধ হয়ে থাকে তাহলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে তারপর।