রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ , ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৮:২০, ১৭ জানুয়ারি ২০২২

বিশ্বের বৃহৎ সিরামিক পল্লি হবে বাংলাদেশে

বিশ্বের বৃহৎ সিরামিক পল্লি হবে বাংলাদেশে

সেখ বশির উদ্দিন


আপনারা নতুন করে তৈজসপত্রের ব্যবসায় নেমেছেন। হঠাৎ করে এ ব্যবসায় নামার কারণ কী?

সেখ বশির উদ্দিন: ২০১২ সালে আমরা সিরামিক ব্যবসা শুরু করি। ওই সময় আমরা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ উৎপাদনক্ষমতা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সিরামিকের বাজারে আকিজের নামটি ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। সিরামিকে সফলতার পর আমরা স্যানিটারিওয়্যারে বিনিয়োগ করি। সেখানেও বেশ ভালো সফলতা পেয়েছি। বাংলাদেশের একমাত্র কোম্পানি হিসেবে আকিজ দুবাই ও ইংল্যান্ডে ধারাবাহিকভাবে স্যানিটারিওয়্যার রপ্তানি করছে। এর মধ্যে একবার আমি জার্মানিতে একটি বড় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ভিজিটে যাই। সেখানে গিয়ে রোজেন থাল নামের বিশ্বের নামকরা একটি তৈজসপত্রের কোম্পানির কারখানা পরিদর্শন করি। ওই কারখানায় গিয়ে দেখি তারা কাপ তৈরি করছে যন্ত্রে আর সেটির হাতল লাগাচ্ছে হাতে। তখন আমার মনে হলো, এ কাজে যদি জার্মান একটি কোম্পানি অধিক অর্থ ব্যয় করে করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না। তখনই মনে হয়েছে তৈজসপত্রের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের একটি বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ভাবনা থেকেই আমাদের এ ব্যবসায় বিনিয়োগ।

শুধু কি বৈশ্বিক বাজারের সম্ভাবনা থেকেই এ ব্যবসায় বিনিয়োগ? নাকি দেশের বাজারকেও বিবেচনায় নিয়েছিলেন।

সেখ বশির উদ্দিন: শুধু বিদেশের বাজার নয়, এ খাতে বিনিয়োগের আগে আমরা দেশের বাজারকে বিবেচনায় নিয়েছি। বাংলাদেশের প্রথম তৈজসপত্রের কারখানা তাজমা চালু হয়েছিল পঞ্চাশের দশকে। এরপর আশির দশকে এ খাতে বিপ্লব ঘটায় মুন্নু সিরামিক। ২০০০ সালের দিকে ফার সিরামিক বাজারে আসে। আমরা দেখেছি তৈজসপত্রের উৎপাদনব্যবস্থাটি মূলত আধুনিক যন্ত্রপাতি ও নন্দনশৈলীর ওপর নির্ভরশীল। এসব বিবেচনায় নিয়ে দেশের বাজারের সম্ভাবনা যাচাই করতে গিয়ে দেখলাম, এ শিল্পে একসময় যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরা এখন আর খুব বেশি সক্রিয় নেই। ফলে যে শূন্যতা বিরাজ করছে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে এ খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিই।

নতুন এ কারখানায় বিনিয়োগের পরিমাণ কত? কত লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে?

সেখ বশির উদ্দিন: ময়মনসিংহের ত্রিশালে ২৫ একর জায়গার ওপর নতুন এ কারখানা গড়ে তুলেছি আমরা। ২০১৮ সালে এটির কাজ শুরু হয়। গ্যাস–সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে আমাদের কিছুটা সময় লেগেছে। এ পর্যন্ত বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকার মতো। ধীরে ধীরে এটির উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো হবে। বর্তমানে কারখানাটির প্রতিদিনের উৎপাদন সক্ষমতা ৫৫ হাজার পিস। আগামী সাত–আট মাসের মধ্যে এ সক্ষমতা বাড়িয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার পিসে উন্নীত করা হবে। তখন এ শিল্পে মোট কর্মসংস্থান বেড়ে দাঁড়াবে তিন হাজারে। ত্রিশালে যেখানে তৈজসপত্রের কারখানাটি অবস্থিত, সেখানে ১৫০ একর জায়গা নিয়ে আমাদের পুরো সিরামিক শিল্প গড়ে তুলছি। যেভাবে সেখানে কারখানা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটি হবে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সিরামিক পল্লি।

ত্রিশালে যেখানে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানে ১৫০ একর জায়গা নিয়ে আমাদের পুরো সিরামিক শিল্প গড়ে তুলছি। যেভাবে সেখানে কারখানা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটি হবে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সিরামিকপল্লি।

তৈজসপত্র ছাড়া আর কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করেছেন?

সেখ বশির উদ্দিন: আমরা হবিগঞ্জে ৯০ একর জায়গার ওপর নতুন একটি ফ্লোট গ্লাস কারখানা করছি। আশা করছি ২০২৪ সাল নাগাদ এ কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে পারব। এ ছাড়া আমরা সিরামিক শিল্পের কাঁচামাল দেশে তৈরির চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমরা এ শিল্পের কাঁচামাল ইংল্যান্ড, স্পেন, জাপান, তুরস্ক, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে থাকি। আগামী ২০২৪–২৫ সালের মধ্যে আমরা আমাদের সিরামিক শিল্প এলাকায় সাত–আট হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। বর্তমানে সেখানে ছয় হাজারের মতো লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

আপনি বলছিলেন, তৈজসপত্রের নতুন কারখানায় সবচেয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ লোকের সম্মিলন ঘটিয়েছেন। তাতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে না? সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম থাকবে তো?

সেখ বশির উদ্দিন: আমরা যখন কোনো পণ্য তৈরি করি, তখন দামের চেয়েও আমাদের কাছে প্রধান বিবেচ্য থাকে পণ্যের গুণগত মান। আমরা এমনভাবে পণ্য তৈরি করি, যাতে তার বাজারমূল্যের চেয়ে নান্দনিক মূল্য অনেক বেশি থাকে। যেটিকে আমরা বলি, ‘দামের চেয়ে দামি’। এ ছাড়া আমরা বিপুল পরিমাণ পণ্য তৈরি করি বলে উৎপাদন খরচ কমে আসে। ক্রেতা বা গ্রাহকদের আমরা এটুকু আশ্বস্ত করতে পারি, আমাদের পণ্য কিনে কারও মনে হবে না দাম বেশি।

রপ্তানি ও দেশীয় বাজার মিলিয়ে বছরে কী পরিমাণ পণ্য বিক্রির পরিকল্পনা করেছেন?

সেখ বশির উদ্দিন: আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৫০০ কোটি টাকার তৈজসপত্র রপ্তানি হয়। আশা করছি, সেখানে আমাদের প্রতিষ্ঠান বছরে ২০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে পারবে। পাশাপাশি দেশের বাজারেও বছরে ২০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির পরিকল্পনা করছি। এ জন্য আমরা এ খাতের সেরা সব মানুষকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত করেছি।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়