‘ধৈর্য না থাকলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া যাবে না’
সাইফ মোরশেদ— একজন ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে প্রায় এক যুগ ধরে কাজ করছেন। ফ্রিল্যান্সিং জীবনের শুরুর দিকের নানান অভিজ্ঞতা ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন ডেইলি বাংলাদেশ-এর সঙ্গে।
একযুগ আগে আপনারা যখন শুরু করেছিলেন, তখন ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা কেমন ছিল?
- তখনকার তুলনায় বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মের সংখ্যাটাও বেড়েছে। মানুষের কাছে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি পরিচিত ছিল না। কাজের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই ভোগ করেছিলাম।
ফ্রিলেন্সিং জগতে কীভাবে আসলেন?
- বর্তমানে খবরের কাগজ কিংবা বিলবোর্ডেও ফ্রিল্যান্সিং শব্দটি দেখা যায়। আমি যখন নেটওয়ার্কিং নিয়ে ডিপ্লোমা করছি তখন আউটসোর্সিং শব্দটি প্রথম শুনি। এবিষয়ে জানতে গিয়ে কিছু ওয়েবসাইটের ধারণা পাই। যেমন, freelancing.com, odesk.com(upwork), fiverr ইত্যাদি তখন আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। আমার পড়াশোনা যেহেতু কম্পিউটার সম্পর্কিত, ওই সুবাধে আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে আরো ধারনা নিই। পরে SEO এবং Data entry নিয়ে Odesk এ কাজ শুরু করি। এরপর web design এর কাজ শুরু করি।
প্রথম কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
- আমি প্রথম যে কাজটি পেয়েছি, সেটি রাত জেগে জেগে ৪ মাসের মাথায় পেয়েছি। রাতে জেগে থাকতাম কারণ ক্লাইন্টরা তখন আসতো। অপেক্ষায় থাকতাম কখন ক্লাইন্ট ম্যাসেজ দেবে এবং সঙ্গে সঙ্গেই রিপ্লাই দেবো। ফ্রিলেন্সিং এর কাজ হচ্ছে মূলত ধৈর্যের কাজ। ধৈর্য না থাকলে সফল হওয়া যাবে না।
যখন কাজ শুরু করলেন তখনের বাজার কেমন ছিল?
- প্রথমদিকে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। প্রথমে আমি ১৫ সেন্টের কাজ করি প্রায় ছয়মাস। প্রথম ২৫০ ডলার আয় করি ঘণ্টায় ১৫ সেন্ট করে। এরপর ৩০ সেন্ট, ২ ডলারে কাজ করেছি। তারপর আস্তে আস্তে কাজ ও ডলার বৃদ্ধি পেলো। প্রথম কাজ করেছিলাম ডাটা এন্ট্রি নিয়ে, এখন কাজ করছি ওয়েব প্রোগ্রামার হিসেবে। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একটি ইন্ডিয়ান ও একটি অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানিতে ফুলটাইম কাজ করছি। ‘ওয়েব জেপ টেকনোলজি’ ও ওয়েব ডিজাইন কোম্পানি ‘ডব্লিউ এইচ কে’ তে কাজ করছি। তাছাড়া দুবাই ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু ফিক্সড ক্লায়েন্ট রয়েছে।
তখনকার অসুবিধার কথা শুনতে চাই...
- এখনকার মতো নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা তখন ছিল না। অনেক সুবিধা অসুবিধার মধ্যে কাজ করেছিলাম। টাকা আনার বিষয়ে জটিলতায় ভুগেছিলাম। বিভিন্ন বিদেশি মাধ্যমে টাকা আনতে হতো। পরে ব্যাংক ও অন্যান্য মাধ্যমে টাকা আসা শুরু হওয়ায় আমাদের উপকার হয়েছে।
ফ্রিলেন্সার হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে কেমন বোধ করতেন?
- ফ্রিল্যান্সিং মানুষের কাছে অপরিচিত হওয়ায় পেশাগত কোনো পরিচয় ছিল না বললেই চলে। তাই পেশাগত কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে এখন এটি একটি পরিচিত পেশা, সবার কাছে এ পেশা সম্পর্কে ভাল ধারণা রয়েছে।
বাংলাদেশের ছেলে মেয়েরা এখন অনেক বড় বড় প্ল্যাটফর্মে অনেক বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করছে। সরকারও এ বিষয়ে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মে কাজের পরিধি যেমন বাড়ছে, প্রতিযোগিতাও তেমনি বাড়ছে। কাজের সম্ভাবনাও রয়েছে অনেক। আমি মনে করি ভালোভাবে কাজ শিখে দক্ষ হয়ে এই পেশায় আসলে, ভবিষ্যতে আমরা আরো ভালো করবো।
নতুনদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলার থাকে...
- যেকোন কাজেই সফলতা পেতে হলে ধৈর্যধারণ করা খুবই প্রয়োজন। নতুনদের বলবো, ধৈর্য ধরে ভালোভাবে কাজ শিখে তারপর কাজ শুরু করো। বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্ট বিভিন্ন সময় আসবে, তাদের সময় মেইন্টেন করে বিড করতে হবে। তাদেরকে দ্রুত রিপ্লাই দিয়ে তাদের সময় মতো যোগাযোগ রাখতে হবে। তারা সময়কে খুব গুরুত্ব দেয়। বিড করার সময় হুটহাট বিড না করে ক্লাইন্টের কাজ কি সেটা দেখে-শুনে-বুঝে তারপর বিড করতে হবে। কভার লেটারে ওই কাজের ছোট বিবরণ দিতে পারলে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
আপনার বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে?
- ফ্রিল্যান্সার হিসেবেই কাজ করছি। স্থানীয় প্ল্যাটফর্মেও অনেক কাজ করেছি। ২০১৬ সাল থেকে ‘নিউ হরাইজোন লার্নিং সেন্টার, চট্টগ্রাম’ এ ট্রেইনারের দ্বায়িত্বে আছি। পাশাপাশি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ‘HighTech solution’ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। এখানে ফ্রিল্যান্সিং এবং টিমওয়ার্ক নিয়ে কাজ করছি।