মনোমুগ্ধকর কাপ্তাইয়ের অপরুপ নুনছড়ি খুম
দুই পাহাড়ের মাঝখানে স্নিগ্ধ জলরাশি বয়ে চলছে। আশেপাশে হতে নানা রকম পশু পাখির কিচির মিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। জনমানব শূন্য কোলাহল মুক্ত শান্ত নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে শুধুমাত্র পানির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। মনোমুগ্ধকর সুন্দর এই স্থানটি হলো নুনছড়ি খুম। যা এখনো পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পায়নি।
কাপ্তাই উপজেলাধীন ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের নুনছড়ি মারমা পাড়ার উপরে এটি অবস্থিত। প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই খুমটি অবস্থিত। কখনো হাঁটু সমপরিমাণ পানি, কখনো গলা অবধি পানি পেরিয়ে এই খুমের সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। বাঁশের কিংবা কলা গাছের ভেলায় চড়ে খুমের গভীর পানি পার হতে অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি লাগে। খুমের দুই পাশে পাহাড়ের ভাজে ভাজে লুকিয়ে রয়েছে পাহাড়ের সৌন্দর্য। এর কারুকাজ সত্যিই মুগ্ধ করবে প্রকৃতি প্রেমীদের। দূর পাহাড়ের রাম পাহাড় থেকে পানি এসে আছড়ে পড়ছে এই নুনছড়ি খুমে। আবার এই নুনছড়ি খুমের উপরে রয়েছে নুনছড়ি ঝর্ণা। যেখানে গিয়ে পর্যটকরা ঝর্ণার পানিতে ভীজে প্রশান্তি লাভ করতে পারবে।
কেন এই খুম বা ছড়ার নাম নুনছড়ি হলো, তা জানতে গিয়ে সত্যি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হতে হয়েছে।
সম্প্রতি কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পর্যটকসহ নুনছড়ি খুম দেখতে যায়। এ সময় পর্যটকদের সাথে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা অংচিনু মারমা বলেন, এই ঝর্ণার পানিগুলোর স্বাদ নুনের মতো, তাই এটাকে নুনছড়ি খুম বা নুনছড়ি ঝর্ণা বলে। এই ছড়ার পানির স্বাদ মুখে নিয়ে দেখলেই বুঝা যায় সত্যিই পানিগুলো স্বাদ নুনের মতো।
নুনছড়ি খুম দেখতে আসা চট্টগ্রামের কুমিরা আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি প্রথমবারের মতো এই নুনছড়ি খুম দেখতে আসলাম। সত্যি এই খুমটা দেখতে খুবই মনোমুগ্ধকর।
কাপ্তাই শিল্প এলাকা থেকে আসা পর্যটক বীরেন মারমা বলেন, আমিও প্রথমবারের মতো এখানে আসলাম। এটি প্রাকৃতিক ভাবেই খুবই সুন্দর।
নুনছড়ি খুম দেখতে আসা ইউটিবার এবি চাকমা বলেন, জায়গাটি যদিও কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ তবুও প্রথমবারের মতো এসে খুব ভাল লাগছে। আমরা বান্দরবানের নাফাখুম এবং দেবতা খুমের কথা শুনেছি, কিন্তু কাপ্তাইয়ের নুনছড়ি খুমটা দেখতে খুবই মনোমুগ্ধকর।
খুম দেখতে আসা কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, আমার নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল কাপ্তাই উপজেলাকে একটি পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলার কথা। তাই পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আমি ছুটির দিনে উপজেলার বিভিন্ন ছড়া, ঝর্ণায় যাচ্ছি এবং এগুলো প্রচারের ব্যবস্থা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমার কাপ্তাই উপজেলায় ছোট বড় অনেকগুলো ঝর্ণা আছে, কিন্তু এতদিন কোন খুমের কথা জানতে পারিনি, অথচ পর্যটকরা খুম দেখতে বান্দরবান যাচ্ছে। তাই আমরা এই নুনছড়ি মারমা পাড়ায় একটা খুমের কথা জানতে পারি এবং এখানে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় এসে আমি সহ একদল পর্যটক অনিন্দ্য সুন্দর এই খুমের সন্ধান পাই। আশা করছি এটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হলে পর্যটকরা এই খুম দেখতে আসবেন এবং এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।
*কিভাবে যাবেন নুনছড়ি খুমে-
কাপ্তাই-ঘাগড়া-রাঙামাটি সড়কের নোয়াপাড়া মারমা পাড়া হতে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে কাঁচা সড়ক পার হয়ে প্রথমে নুনছড়ি মারমা পাড়ায় যেতে হয়। তারপর নুনছড়ি মারমা পাড়া থেকে ২০ মিনিটে নুনছড়ি ছড়া পাড়া হয়ে এই খুমের দেখা মিলবে। এই খুমে যেতে পথের এক পাশে ছোট ছোট পাহাড়ের অপরুপ সৌন্দর্য আর একপাশে ক্ষেত, নানারকম গাছ-গাছালি এবং পাখির কিচির মিচির শব্দ যে কেউকে মুগ্ধ করবে। তবে নোয়াপাড়া থেকে নুনছড়ি মারমা পাড়া পর্যন্ত সড়কটি বর্ষাকালে চলাচল করতে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এই রাস্তাটি সংস্কার করে পর্যটকদের কাছে নুনছড়ি খুম এবং নুনছড়ি ঝর্ণার কথা প্রচার করা গেলে এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা পর্যটনকে ঘিরে কিছুটা স্বাবলম্বী হবেন বলে আশা করছেন এলাকার বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।
