রাঙামাটি । রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১১:২৮, ২৭ আগস্ট ২০২৪

কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়া অব্যাহত, নিম্নাঞ্চলে তেমন প্রভাব পড়েনি

কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়া অব্যাহত, নিম্নাঞ্চলে তেমন প্রভাব পড়েনি
কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়ার পর কর্ণফুলী নদীর অবস্থা।

টানাবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসায় কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমায় পৌঁছায়। পানির চাপ সামলাতে কাপ্তাই বাঁধের স্পীলওয়ের (জলকপাট) গেইট খুলে দিয়ে পানি নির্গত করা হয়। গত রোববার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে বাঁধের ১৬টি জলকপাট দিয়ে ৬ ইঞ্চি করে বাঁধের পানি কর্ণফুলী নদীতে অপসারণ করা হয়। পানি ছাড়া অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে ব্যাপক প্রচারণার কারণে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী মানুষের মাঝে দেখা দেয় আতংক। কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়ার পর প্লাবিত হওয়ার ভয়ে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। অন্যদিকে রাঙ্গুনীয়সহ একাধিক উপজেলায় নদীর তীরবর্তী মানুষদের সরে যেতে প্রচারণাও করা হয়। ফলে কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়ার আতংক ছড়িয়ে পড়ে পাশের চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায়। অথচ বাঁধের পানি অপসারিত হয়ে কর্ণফুলী নদী পথে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলিত হয়।

এদিকে, কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়লেও গত তিনদিনে তেমন কোন বিপর্যয় বা নদীর পানিতে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। 

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাপ্তাই উপজেলাধীন কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকায় সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়ায় এর কোন প্রভাব পড়ার দেখা মিলেনি। কর্ণফুলী নদীর পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে। 

এছাড়া কাপ্তাই ও রাঙ্গুনীয়া উপজেলার দুই অংশে পড়া চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট এলাকার উভয় অংশে গিয়ে দেখা যায়, কাপ্তাই বাঁধের গেইট খোলা রাখার কারণে ঝুঁকি মোকাবেলায় রোববার পর্যন্ত চন্দ্রঘোনা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলেও সোমবার বেলা ১২টা থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর চন্দ্রঘোনা অংশে অনেক জেলেকে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে।

কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী কাপ্তাই উপজেলার বাসিন্দা মোঃ আবুল হোসেন, হাফিজুর রহমান, মোমেনা বেগমসহ কয়েকজন জানান, আমরা প্রথম দিকে কাপ্তাই বাঁধ ছাড়ার খবর শুনে বেশ আতংকে ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে সেই আতংক বা ভয় কেটে গেছে। এখন কর্ণফুলী নদীর পানি একদম স্বাভাবিক আছে। তবে বাঁধের গেইট খোলা থাকা অবস্থায় নদীতে স্রোতের দেখা মিললেও এতে ভয়ের কিছু ছিলনা। এ সময় তারা নিজেরাও কর্ণফুলী নদীতে নেমে দৈনন্দিন কার্য সম্পাদনও করেছেন।

অপরদিকে, চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা শামসুন নাহার, ববিতা মারমাসহ কয়েকজন বলেন, কাপ্তাই বাঁধ প্রতিবছরই কমবেশি ছাড়া হয়। কাপ্তাই বাঁধ ছাড়ার পর আমরা কখনো বন্যা বা বিপর্যয়ের চিত্র দেখিনি। এবার কতিপয় ব্যক্তিরা এনিয়ে গুজব ছড়ানোর কারণে জনমনে আতংক সৃষ্টি করেছে। ফলে মানুষের মাঝে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

কর্ণফুলী নদীতে মাছ ধরতে আসা কয়েকজন জেলে জানায়, কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়লে নদীতে মাছও ভেসে আসে। এসময় বেশ ভাল মাছও পাওয়া যায়। তবে বাঁধের গেইট খোলা থাকা অবস্থায় মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবুও আমরা জীবন জীবিকার তাগিদে মাছ ধরতে এসেছি।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত রবিবার থেকে বাঁধের স্পীলওয়ের ১৬টি গেইট দিয়ে মাত্র ৬ ইঞ্চি করে পানি ছাড়া অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১০টায় রুলকার্ভ অনুযায়ী হ্রদে পানির লেভেল রয়েছে ১০৮. ৯২ ফুট এমএসএল। এতে আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

প্রসঙ্গত, কাপ্তাই বাঁধ দেশের রাঙামাটি জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত। চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উজানে কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত একটি বাঁধ। কাপ্তাই হ্রদ নামে পরিচিত। এর একটি কৃত্রিম জলাধার রয়েছে যার পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট মীন সী লেভেল (এমএসএল)। এর আয়তন ৫২,৫১,০০০ একর (২১,২৫,০০০ হেক্টর)। বাঁধ ও হ্রদটি নির্মাণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। ১৯৬২ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বাঁধের সঞ্চিত পানি ব্যবহার করে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ১৯৬২ ও ১৯৮৮ সালের মধ্যে এখানে ৫টি ইউনিট স্থাপিত হয়। এসব ইউনিটে সর্বমোট ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বাঁধ ও একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ