রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ , ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১২:৪১, ১৬ জুলাই ২০২৩

আপডেট: ১২:৩৭, ১ আগস্ট ২০২৩

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবসঃ গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলিত করার অপপ্রয়াস

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবসঃ গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলিত করার অপপ্রয়াস

দেশরত্ন শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস আলোচনা করার পূর্বে একজন শেখ হাসিনা থেকে গণতন্ত্রের মানস কন্যা, জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত একজন জননেত্রী ও বর্তমান বিশ্বের সফলতম প্রধানমন্ত্রীদের একজন হয়ে ওঠা ও বিশ্বমানবতার জননী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুদীর্ঘ ইতিহাস উপস্থাপন করা প্রয়োজন।

আজকে তাঁর কারাবন্দী দিবসে তিনি যে, অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও সর্বোপরি দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তাঁকেই কিনা মিথ্যা ও কল্পিত চাঁদাবাজীর মামলা দিয়ে কারা অন্তরীণ করা হয়েছিল। তাঁর এই মামলা ও রাজনৈতিক জীবন সংগ্রমের ইতিহাস অতি সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরা চেষ্টা করেছি মাত্র।

গণতান্ত্রিক ও মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে শেখ হাসিনার এক সুদীর্ঘ পথ চলা। যা তিনি তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাহচর্যে থেকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠেন। ৬৬ সালে ইডেন গার্লস কলেজ নির্বাচিত ভিপি হিসেবে ছাত্র সমাজের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন, এরপর ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে শেখ হাসিনাকে গৃহবন্দি করা হয়। এরপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে বাঙালি পায় স্বাধীনতা। চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয় নতুন একটি দেশ বাংলাদেশ।

কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি, তাদের এদেশীয় দালালরা দেশের মধ্যে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে। এরপর ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কে সপরিবারে হত্যা ও একই বছর ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর জাতীয় চারনেতাকে পৃথিবীর সুরক্ষিত স্থান কারাভ্যন্তরে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র চলে। সেই সময় জাতির জনকের দুই কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। এরপর বাঙালির করুন ইতিহাস জননেত্রী শেখ হাসিনাকে তৎকালীন সামরিক সরকার দেশে ফিরতে বাধা সৃষ্টি করে নানারকম অপতৎপরতা চালায়। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সামরিক সরকার জিয়াউর রহমান দেশে নির্বাচনের আয়োজন করেন এবং রাজনীতিতে বেচাকিনা রাজনীতির শুরু করেন। তিনি আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম অপতৎপরতা চালিয়ে আওয়ামীলীগকে ভাঙার অপচেষ্টা চালানো এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। এতে করে আওয়ামী লীগ দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। দলের এই ভাঙ্গন রোধের জন্য দলের ঐক্যের প্রতীক হিসাবে শেখ হাসিনাকে দলের হাল ধরার প্রস্তাব দেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন জেষ্ঠ্য নেতৃবৃন্দ এবং ১৯৮১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রবাসে অবস্থানকালীন সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ ও লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী দাবির কাছে নতি স্বীকার করে তৎকালীন সামরিক সরকার শেখ হাসিনা দেশে ফিরে যেতে দিতে বাধ্য হয়।

তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮১ সালের ১৭মে দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রিয় স্বদেশ প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। এ যেন এক মাহেন্দ্রক্ষণ। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর গগনবিদারী স্লোগান "ঝড় বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে, "তাদের প্রাণের নেত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নিতে বিমানবন্দরে এসে উপস্থিত হয়। তাদের ভালবাসায় আপ্লুত শেখ হাসিনা সেদিন বলেন: "আমি আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি, আপনাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য,, "সেই থেকে শুরু হয় গণতন্ত্র রক্ষা ও মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের নিরন্তর সংগ্রাম। এই সংগ্রাম কখনোই সহজ ছিল না স্বাধীনতা বিরোধীদের টার্গেট ছিল শেখ হাসিনা তাইতো ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে এ পর্যন্ত তাকে ২৩ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তার শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে তাকেসহ আওয়ামীলিগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল সরকারি মদদে। সে হামলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে প্রাণ দিতে হয়। সেদিন মুজিব আদর্শের ও বিশ্বাসের উত্তরাধিকারীরা মানববর্ম রচনা করে তাদের প্রিয় নেত্রী কে রক্ষা করেন। বহু সিনিয়র নেতৃবৃন্দের শরীরের গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করে পরে অনেকেই প্রাণ হারান।

১৯৮১ সালে সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান এক সেনা অভ্যুত্থানের প্রাণ হারালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরেক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের সিংহাসন আরোহন ঘটে।গণতন্ত্র আবার বেয়নেট আর বুটের তলায় পদপিষ্ট হতে থাকে। সামরিক জান্তার হাত থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার সংকল্প গ্রহণ করেন জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। শুরু হয় আন্দোলন-সংগ্রাম।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ছাত্রলীগ-যুবলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সেই সময়ে সামরিক সরকারের পেটোয়া বাহিনীর হাতে প্রাণ হারান। প্রাণ হারান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সেলিম, দেলোয়ার, রাউফুন বসুনিয়া, শিশু একাডেমিতে রিহার্সালে অংশ নিতে যাওয়া ৭ বছরের শিশু দিপালী সাহা। যার মৃতদেহ আর পাওয়া যায়নি।যুবলীগ নেতা নূর হোসেন বুকে ও পিঠে স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক লিখে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে পিচঢালা রাজপথ রক্তে রন্জিত করে নিজেই গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতিক হিসেবে আজও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসে সমুজ্জ্বল। চট্টগ্রামের প্রাণ হারান জয়নাল, রাজশাহীতে প্রাণ হারান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম দুলাল ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র জিয়াবুল। স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তিন জোটের রূপরেখা ও ছাত্রসমাজের ১০ দফার ভিত্তিতে হলেও পরবর্তীতে আন্দোলন এক দফায় রূপ নেয় তা হল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন।

আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়। মানুষ আশায় বুক বাধে গণতন্ত্রের সুবাতাস হয়তো এবার আসবে। দেশে নির্বাচন হয় ৯১ সালে সেই নির্বাচনে দেশীয় আন্তর্জাতিক চক্রান্ত আওয়ামী লীগের পরাজয় নিশ্চিত করে। ক্ষমতায় আসীন হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সেই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন:" গণতন্ত্র একটি নবজাতক শিশু, একে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের।"

কিন্তু গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত সরকার দেশের জনগণের অধিকার নিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার ভোট ও ভাতের অধিকার কে নিয়ে তামাশা শুরু করে। উপ-নির্বাচন গুলোতে একের পর এক কারচুপি করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পরাজিত করে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের কে পরাজিত করার নীলনকশা প্রণয়ন করে। তার প্রমাণ আমরা ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেখেছি। ঢাকাবাসীর প্রানের নেতা মোহাম্মদ হানিফকে পরাজিত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে যা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করে লালবাগ হত্যাকান্ডের মধ্যেদিয়ে।এরপর ভোলা, মিরপুর ও মাগুরার উপ-নির্বাচন। আবার শুরু হয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। এই আন্দোলনের সংগ্রামে আবারো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দ সহ দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

এ আন্দোলনে শেষ পর্যায়ে সরকার ১৫ ফেব্রুয়ারি এক প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে।কিন্তু এই নির্বাচন জনগণ মেনে নেয়নি ফলে সরকার বেশি দিন টেকেনি। এক মাসের মাথায় এসে সরকার বিরোধী দলের আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে পদত্যাগের পূর্বে বিরোধী দলগুলোর দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সংবিধানে সন্নিবেশিত করে। মানুষকে ফিরে পায় তার মৌলিক অধিকার, ভোট ও ভাতের অধিকার। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, গঠন করে ঐক্যমতের সরকার। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিরলস পরিশ্রম ও দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে, অবিরাম কাজ করে চলে। দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ বৃদ্ধি,শিক্ষা, স্বাস্থ্য,অবকাঠামো সকল সেক্টরে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করে।

কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দলগুলোর ইস্যু বিহীন আন্দোলন মোকাবেলা করে সরকার পূর্ণ মেয়াদ পূরণ করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়। আবার শুরু হয় ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ঠেকানোর ষড়যন্ত্র।নির্বাচনে জনগণ আবার পরাস্ত হয়,গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে।বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের কথামতো বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস তাদের প্রেসক্রিপশন মতো উত্তোলন ও বিক্রি করা হতো তাহলে হয়তো ষড়যন্ত্র চক্রান্ত বন্ধ হতো।কিন্তু এটা কি সম্ভব?আমার দেশের সম্পদ কারো নির্দেশ মতো বিক্রি করতে হব!তাও আবার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষেত্রে?অসম্ভ তাইতো সেইদিন জাতির পিতার কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সকল রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাপের বেটির মতো সদর্ভে বলেছিলেন আমার দেশের গ্যাস আমার জনগণের ৫০বছরের চাহিদা মেটানোর পর যদি উদ্বৃত্ত থাকে তাহলেই ভেবে দেখব তা বিক্রি করা যায় কিনা।আর এতেকরে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের চক্ষুশূল হলেন শেখ হাসিনা ও তার সরকার।শুরু হয়ে গেল ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত।যেকোনো উপায়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে পরাজিত করে ক্ষমতার বাইরে রাখতে পারলে এবং তাদের পছন্দের দলকে ক্ষমতায় আনতে পারলে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।হলো তাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত কর ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসেই তাদের সীমাহীন দূর্নীতি,সন্ত্রাস, লুটপাট, স্বজনপ্রীতি,সরকারের ভেতরে সরকার জনগণকে অতিষ্ঠ করে তোলে।সর্বত্র বিরাজ করে আতঙ্ক। আতঙ্কের নাম হওয়া ভবন।পর্ণকুটির থেকে বহুতল ভবন,জনপদ থেকে রাজপথ,শহর থেকে বন্দর,গ্রাম থেকে গঞ্জ, সর্বত্র এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। বিএনপি-জামাত জোটের ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকার সময়ে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো কার্যত ভেঙে পড়ে।দেশে দুর্নীতির মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে,পরপর ৩ বার দুর্নীতিতে দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। বিরোধী দলের আন্দোলনে ভীত হয়ে বিএনপি-জামাত জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে মেনে নিতে গড়িমসি করে।একপর্যায়ে তাদের দলের মনোনীত ব্যক্তি দলীয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে ষড়যন্ত্রের নীল নকশার নির্বাচনের আয়োজন করে এবং ভুয়া ভোটের মাধ্যমে আবার ক্ষমতার মসনদে বসতে তাদের অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে।

দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরোধীদলের আন্দোলনে দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র আন্দোলন সংগ্রাম স্ফুলিঙ্গ আকার ধারণ করে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা বিএনপি ও জামায়াতের জোটের পাতানো নির্বাচন বয়কট করে। দেশের এই সংকট মুহূর্তে সেনাবাহিনীর সহায়তায় নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল করে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করে সেনা, RAB পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর টাস্কফোর্স। দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী ও লুটেরাদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে কারাগারে নিয়ে বন্দী করে রাখে। এখানে একটি মজার বিষয় লক্ষ্য করা যায় যে জনগণের আন্দোলনের কাছে পরাজিত সরকার সরকারি দলের নেতা-কর্মী গ্রেফতার হওয়ার কথা থাকলেও সরকারের অংশীদার স্বাধীনতা বিরোধী জামাত শিবিরের কাউকে যৌথবাহিনী গ্রেফতার করেনি। দেশে আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র দানা বাঁধতে থাকে। শেখ হাসিনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র।

কিভাবে শেখ হাসিনাকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়।সংস্কারের নামে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের কাজটি শুরু হয় তখন। শেখ হাসিনা সেই সময় বিদেশে অবস্থান করছিলেন তাকে দেশে ফিরতে বাধা দেওয়া হয়।সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে ও রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশে ফিরেন। সেনা সমর্থিত সরকার মাইনাস টু ফর্মুলা অংশ হিসেবে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ১৬ই জুলাই গ্রেপ্তার করেন গ্রেফতারের পূর্বে ১৫ ই জুলাই রাত ১১ টায় যৌথবাহিনীর কয়েকটি টিম আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বাসভবন সুধাসদনের চারদিকে টহল দেয়। গভীর রাতে তারা এ ভবনের চারদিকে অবস্থান নেয়। নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলে। প্রায় শতাধিক জীপ,পিকআপ,অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যৌথ বাহিনীর দুই সহস্রাধিক সদস্য সুধাসদন ঘিরে ফেলে। এ সময় শেখ হাসিনা ঘুমাচ্ছিলেন।

যৌথবাহিনীর কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেখানে প্রবেশ করে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের খবরটি নিশ্চিত করেন।তিনি তাদের অপেক্ষা করতে বলেন এবং ফজরের নামাজ আদায় করেন এবং জাতির জনকের কন্যা জাতির জনক এর মতই বীরদর্পে যৌথবাহিনীর সাথে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।এরআগে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তল্লাশির নামে তার শয়ন কক্ষ সহ গোটা সুধাসদনেরপ্রতিটি কক্ষ তছনছ করে।গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে দেশরত্ন শেখ হাসিনা যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তার কাছে মোবাইল ফোন করার ইচ্ছা পোষণ করেন ওই কর্মকর্তা সম্মত হলে তিনি প্রথম ফোন করেন তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে তারপরের ফোনটি করেন আওয়ামী লীগ নেত্রী সাহারা খাতুনকে এবং সর্বশেষ ফোনটি করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে এবং তাকে ভৎসনা করেন।সুধাসদন থেকে আদালত পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যৌথবাহিনী নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে। ইফতারের পূর্ব মূহুর্তে শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লেখেন।

গুলশান থানায় ব্যবসায়ী আজম জে চৌধুরী দায়ের করাচাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহারের আদালতে হাজির করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে।আদালতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেন, "তিনি আদালতকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত,অসাংবিধানিক ও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার কোন ভিত্তি নাই তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমি যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি সেজন্যই এই মামলা দেয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে নির্বাচন দিলেআওয়ামী লীগ ৮০ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবে। সবকিছুর উদ্দেশ্য একটাই আমাকে ইলেকশনে ডিসকোয়ালিফাই করা। তিনি আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ,আমি আপনার কাছে ন্যায়বিচার চাই। শেখ হাসিনা বলেন আমি জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলি এটাই কি আমার অপরাধ? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ত্যাগের ৭ বছর পর আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে এর উদ্দেশ্য কি? যাকে আমি চিনি না সেই ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।তিনি বলেন, রায় তৈরি করা হয়েছে উপর থেকে, যা করে দেয়া হয়েছে তাই আপনি করবেন উপরের নির্দেশ ছাড়া আপনি কোন আদেশ দিতে পারবেন না।আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার আমার রয়েছে।আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরো বলেন জনগণের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস রয়েছে তারা কখনো বিশ্বাস করবে না আমি চাঁদাবাজি করেছি। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার নেই জনগণ চরম দুরবস্থার মধ্যে বসবাস করছে। দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগতিতো রয়েছেই আমি অসহায় মানুষের কথা বলি এটাই আমার অপরাধ।"

জনাকীর্ণ আদালতেশুনানি শেষে একমাসের আটকাদেশ দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয় ম্যাজিষ্ট্রেট।সকাল দশটা ত্রিশ মিনিটে সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত সাবজেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নেয়া হয়।সবচেয়ে দুঃখজনক হতাশাজনক বিষয় হলো যে,যিনি কিনা তার জীবন উৎসর্গ করেছেন এই বাংলার মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে আন্দোলনে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে যার নিরন্তর সংগ্রাম তাকেই চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিচারের নামে প্রহসনের কর্মকাণ্ড সারা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে সবকিছু প্রত্যক্ষ করেছে।সারাদেশে সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলন শুরু হয়ে যায় সেই আন্দোলনের ছোঁয়া দেশ পেরিয়ে প্রবাসেও গিয়ে লাগে এর উত্তাপ।

এই সময়ে দেশে কিছু আমলা,ব্যবসায়ী ও ভ্রষ্ট রাজনীতিবিদরা দিবা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু তাদের এই স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে জনগণ শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে রাজপথ থেকে আদালত পর্যন্ত লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যায়।নেতাকর্মীদের অব্যাহত আন্দোলন-সংগ্রাম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ৩৩১ দিন পর ২০০৮ সালের ১২ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

মুক্ত হয় শেখ হাসিনা, মুক্ত হয় গণতন্ত্র এবং মুক্ত শেখ হাসিনাকে কাছে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় বাংলাদেশের জনগণ।

অভিনন্দন প্রিয় নেত্রী দেশরত্ন আপনার গণতন্ত্রের অভিযাত্রা হোক অবিরত, কেউ কোনদিন করতে পারবে না রুদ্ধ।

লেখকঃ সাবেক ছাত্রনেতা, উপ দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগর

জনপ্রিয়