দরিদ্র, অসহায়, অসুস্থ ও বিপদগ্রস্তদের পাশে থাকতে বলে ইসলাম
প্রকৃত মুমিন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য হলো দরিদ্র, অসহায়, অসুস্থ ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সেবা করা। কেননা মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা সমগ্র মুমিন জাতিকে বানিয়েছেন এক দেহের মতো করে। ফলে দেহের কোনো অংশ আক্রান্ত হওয়া মানে গোটা দেহ আক্রান্ত হওয়া।
উক্ত বিষয়ে বিশ্বনবি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের ন্যায়; যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা’। (মুসলিম: ৬৪৮০)
মানুষকে অসহায়ত্ব থেকে, বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য খরচ করাকে মহান আল্লাহ বিনিয়োগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং সেই বিনিয়োগ তিনি বহুগুণে ফেরত দেওয়ার ওয়াদা করেছেন।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম কর্জ প্রদান করবে? তাহলে তার সেই কর্জকে তার জন্য আল্লাহ বহুগুণ বর্ধিত করে দেবেন এবং আল্লাহই সীমিত ও প্রসারিত করে থাকেন এবং তার দিকেই তোমরা ফিরে যাবে’। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ২৪৫)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহকে কর্জ দেওয়ার অর্থ হলো তার পথে খরচ করা। গরিব, অসহায় ও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করাকে ঋণ বলা হয়েছে রূপকার্থে। কেননা এর বিনিময় দেওয়া হবে উত্তমরূপে।
অন্য আয়াতে রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম কর্জ (ঋণ) দেয়, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান’। (সূরা: হাদিদ, আয়াত: ১৮)
বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি ও কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি। এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা অসহায়দের পাশাপাশি আমাদেরও পরীক্ষা নিচ্ছেন, তাদের ব্যাপারে আমরা কী পদক্ষেপ নিচ্ছি তা দেখছেন। এই পরীক্ষায় পাস করতে হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কতটুকু কতটা পাশে দাঁড়াতে হবে। এর উত্তর হলো- বিপদগ্রস্ত কোনো মুমিন আপন ভাই হলে যতটা কাছে থাকতেন, ঠিক ততটাই। তাকে বিপদ থেকে ভাইয়ের মতো উদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে। তার সম্মানহানী যেন না হয় সেই চেষ্টা করতে হবে। তাকে শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে হবে।
মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘মুসলমানেরা পরস্পর ভাই ভাই। কেউ কারো প্রতি জুলুম করে না এবং শত্রুর কাছে হস্তান্তর করে না। যে লোক তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের একটি কষ্ট লাঘব করবে, আল্লাহ তার কেয়ামতের দিনের একটি কষ্ট লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার দোষত্রুটিও গোপন রাখবেন’। (আবু দাউদ: ৪৮৯৩)
আল্লাহর পরীক্ষায় পাস করতে হলে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন, দরিদ্র প্রতিবেশী, এতিম-মিসকিনসহ প্রত্যেক নিঃস্ব ও অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিকল্প মুমিনদের নেই। এতেই নীহিত রয়েছে মহান আল্লাহর দয়া।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেদিন আসার আগেই যেদিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৫৪)
এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ ফেরানোটাই সৎকর্ম নয়, বরং প্রকৃত সৎকর্মশীল ঐ ব্যক্তি, যে বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, আল্লাহর কিতাব ও নবীদের ওপর এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সম্পদ ব্যয় করে নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, প্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য’। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ১৭৭)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবি মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, ‘দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন’। (আবু দাউদ: ৪৯৪১)
অসহায়দের প্রয়োজনীয় বস্ত্র দিলে জান্নাতলাভের ঘোষণা দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল, মহান আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিয়ে দেবেন’। (তিরমিজি: ২৪৪৯)
মানবতার আদর্শ মহানবি (সা.) এর জীবনের মহিমান্বিত অভ্যাস ছিল উদারচিত্তে দান করা। অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই’। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ২৭৪)
প্রকাশ্য দান-সদকায়ও সওয়াব আছে, যদি রিয়ার মনোভাব না থাকে। তবে, গোপন দান আল্লাহ খুব পছন্দের আমল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো ভালো। আর যদি গোপনে দান করো এবং অভাবগ্রস্তকে দাও তা তোমাদের জন্য অধিক ভালো’। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ২৭১)
তাই আসুন, আমরা সবাই বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াই। আমাদের আশপাশে থাকা অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই। তাদের সহযোগিতা করি। পাশাপাশি নিজেদের কৃত গুনাহ থেকে বেশি বেশি তাওবা করি।
ইয়া আল্লাহ! আমাদের সবাইকে মাফ করুন এবং দরিদ্র, অসহায়, অসুস্থ ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সেবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।