জলবায়ু পরিবর্তনে সমৃদ্ধির পথ; বাংলাদেশের লক্ষ্য দৃঢ়তা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইউ) ক্লাইমেট অ্যাকশন কমিশনার উপকে হোএক্সট্রার সাথে আলোচনার জন্য ও লিজে শহরে এনভায়রনমেন্ট এন্ড ক্লাইমেট মোবিলিটিজ নেটওয়ার্কের (ইসিএমএন) দ্বিতীয় সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য বর্তমানে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থান করছেন। এই বছরের নভেম্বরে পরিবেশমন্ত্রীর বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৯ এ যোগ দিতে আজারবাইজানে যাওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে, ব্রাসেলসে মন্ত্রী পলিটিক্যাল এডিটর নিক পাওয়েলের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের কৌশলগত নীতির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন।
নিক পাওয়েল আন্তর্জাতিক মিডিয়া ইউ রিপোর্টারে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সাথে আলোচনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ তুলে ধরেছেন।
এক কলামে, নিক পাওয়েল বলেন, সাবের হোসেন চৌধুরী তাকে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ‘একটি’ ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন, যেখানে মরুকরণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষতি ও আরো অনেক কিছুর বর্ণনা দিয়েছেন।
‘যখন সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, তখন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়, ফলে আপনিও জমি হারাবেন’, সাবের হোসেন চৌধুরী নিক পাওয়েলকে বলেন যে, বাংলাদেশ এখন থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১৭ ভাগ জমি পানির গর্ভে হারিয়ে যাবে ও প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ বাধ্যতামূলক বাসস্থান হারাবে। খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদশ বিগত বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, তবে সেটিও এখন চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে।
নিক পাওয়েল আরো লিখেন, বাংলাদেশের পরিবেশমন্ত্রী তাকে কিছু অবাক করা তথ্য দিয়েছেন। পরিবেশমন্ত্রী পাওয়েলকে বলেন, কপ-২৯ জলবায়ু সংকটের মধ্যে যেসব দেশ আছে সেসব দেশে প্রশমন, অভিযোজন, অর্থের সমস্ত প্রধান থিম জুড়ে নিশ্চিত করে। কপ আশা করে এই থিমগুলো শুধুমাত্র পৃথিবীর জলবায়ুকে ঠিক রাখে না, বরং যেখানে অত্যধিক গরম যেমন প্রাক-শিল্প স্তরের উপরে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে তা প্রশমিত করা।
কার্যকরী অভিযোজনের জন্য, কপ-২৯ এ বিশ্বের ধনী দেশগুলি থেকে অর্থের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাবের হোসেন চৌধুরীর মতে, এই আর্থিক সহায়তা আরো বাড়াতে হবে। সারাবিশ্বে আয়ের থেকে ব্যয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি লক্ষ্যমাত্রা থাকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানোর, তাহলে জরুরি পদক্ষেপে আর্থিক সহায়তা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তাদের জন্য ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতির ধারণাটি প্রথম মিশরের শারম আল-শেখের কপ-২৭ সম্মেলনে সম্মত হয়েছিল।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, শুধুমাত্র অভিযোজনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। এছাড়াও, এবারের কপ-২৯ সম্মেলনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে।
পরিবশমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে অভিযোজনের জন্য প্রতি বছর ৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
জলবায়ু অর্থায়নের নিয়ম ও সংজ্ঞা কপ২৯-এ একমত হওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও পরিবশমন্ত্রী সচেতন। তিনি বলেন, এই সহায়তা কোন ঋণ, বাণিজ্যিক ঋণ হতে পারে না, কারণ প্রথমত সমস্যাটি আমরা তৈরি করিনি তবে আমাদের এটি মোকাবেলা করতে হবে। আমরা যা আর্থিক সহায়তা পাবো তার উপর যদি সুদ দিতে হয়, তাহলে এটি গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, যেহেতু বিজ্ঞান খুব স্পষ্ট এবং সবাই সাইন আপ করেছে এবং বিজ্ঞানে সম্মত হয়েছে, তাই আর বিলম্বের জন্য একেবারেই কোন অজুহাত নেই। প্রক্রিয়ার একটা ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কথা বলি কিন্তু ক্রায়োস্ফিয়ার পরিবর্তন - বরফ গলে যাওয়া, বরফের চাদর, হিমবাহ এবং পারমাফ্রস্টের কারণে ইউরোপের মতো আমেরিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। আমরা আজ যে ক্ষতি দেখতে পাচ্ছি- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন, এগুলো একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবশমন্ত্রী জানান, সেই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু একটি জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি হবে তা নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণও হতে পারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে, হারিকেনের ফ্রিকোয়েন্সিও বাড়বে, ক্ষতির তীব্রতা যা এটি ঘটায় তা সকলেরই দেখার বিষয়। এটি শুধু বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর নয়, বিশ্ববাসীর কণ্ঠস্বর হবে।
সাবের হোসেন চৌধুরী ইউরোপীয় ইউনিয়নকে শক্তিশালী মিত্র হিসেবে দেখেন। ইউ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের অংশীদার এবং দেশটি ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে আরও বাণিজ্য এবং সহযোগিতা অফার করে। জলবায়ুর ক্ষেত্রে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বেশ প্রগতিশীল বলে মনে করেছি।
সূত্র: ইউ রিপোর্টার